গ্লুকোমা অনিরাময়যোগ্য অন্ধত্বের অন্যতম কারণ। বিশ্বের প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ গ্লুকোমার কারণে স্থায়ী অন্ধত্বের শিকার হয়েছেন। আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৮ কোটি, যাঁদের অধিকাংশই এশিয়ার স্বল্পোন্নত দেশের বাসিন্দা। ধারণা করা হয়, ২০৪০ সাল নাগাদ গ্লুকোমায় আক্রান্তের সংখ্যা ১২ কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে। তবে সবচেয়ে ভয়ের কথা, ৯০ শতাংশ আক্রান্ত মানুষ রোগটি সম্পর্কে পুরোপুরি জানেন না।
গ্লুকোমার অন্ধত্ব প্রতিরোধ করতে ‘বিশ্ব গ্লুকোমা সপ্তাহ’ পালিত হয়। এ বছর সপ্তাহটি পালিত হচ্ছে ৬ থেকে ১২ মার্চ। এবারের প্রতিপাদ্য ‘আপনার দৃষ্টি রক্ষা করুন, সুন্দর পৃথিবী উপভোগ করুন।’ দৃষ্টি রক্ষার জন্য গ্লুকোমা সম্পর্কে ভালোভাবে জানা জরুরি। গ্লুকোমা চোখের প্রধান স্নায়ু রজ্জুর একটি রোগ। এতে স্নায়ু রজ্জু ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্ত হতে থাকে। দৃষ্টির পরিসীমা ক্রমাগত সংকুচিত হতে থাকে। আক্রান্ত ব্যক্তি সঠিকভাবে এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করালে স্থায়ীভাবে অন্ধ হয়ে যেতে পারেন।
চিকিৎসকদের মতে, চোখের অন্তর্গত উচ্চচাপ গ্লুকোমার অন্যতম ঝুঁকি। এটি বয়সজনিত একটি রোগ। মূলত ৪০ বছর বয়সের পরই মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। বংশগত ইতিহাস বা মা, বাবা, ভাই, বোন এ রোগে আক্রান্ত হলে তাঁদের ক্ষেত্রে আক্রান্ত হওয়ার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ আশঙ্কা রয়ে যায়। এ ছাড়া ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, চোখের মাইনাস বা প্লাস পাওয়ার, মাইগ্রেন, চোখের আঘাত, চোখের অন্যান্য রোগ এবং চিকিৎসকের উপদেশ ছাড়া অনিয়ন্ত্রিতভাবে স্টেরয়েড–জাতীয় চোখের ড্রপ ব্যবহার করায় এ রোগ হতে পারে।
বয়স ৪০ বছর পেরোনোর পর গ্লুকোমা আছে কি না, তা নিয়মিত পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া জরুরি। চোখের চাপ, স্নায়ু রজ্জুর অবস্থা ও দৃষ্টির পরিসীমা পরীক্ষা করে খুব সহজেই গ্লুকোমা নির্ণয় করা যায়। কখনো কখনো রোগী জন্মগতভাবে কিংবা বাড়ন্ত বয়সেও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে জন্মের পর শিশুর চোখ থেকে পানি পড়া, আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা, অস্বচ্ছ মণি এবং অক্ষিগোলক বড় হতে থাকা—এসব লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত পরীক্ষা করাতে হবে।